জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি বলেছেন, একটি গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের আগামী নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে জনগণ। তাই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা সফল হবে না।
তিনি বলেন, আন্দোলন লড়াইয়ের নামে দেশে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে রাজপথে তা প্রতিহতের আহবান জানান। 
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যোগদান ও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় ভ্যার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাঁর নেতৃত্বের প্রতি একাত্বতা ঘোষণা ও নবাগতদের স্বাগত জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, নতুন পুরাতন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। পার্টিকে শক্তিশালী করতে নবাগতদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান রওশন এরশাদ। দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরন করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, মনে রাখতে হবে দেশের জনগণের বিশেষ করে ৬৮ হাজার গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া অসহায় ছিন্নমূল মানুষের কল্যাণ পল্লীবন্ধু এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পল্লীবন্ধুপুত্র ও রংপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহাগির আল মাহি সাদ এরশাদ। তিনি বলেন, পিতা এরশাদ লাখ লাখ অনুসারি ও নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। কারো নাম ডাক প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। কেউ যদি পার্টিকে নিজের একক সম্পদ মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নতুন-পুরাতন, নবীন-প্রবীন নেতাকর্মীরা সবাই এরশাদের রাজনৈতিক সন্তান। এরাই পার্টির প্রকৃত মালিক। দল চলবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে, কেউ নিজের তত্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না।  
নবাগত ও একাত্বতাকারীদের পার্টিতে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা এমপি বলেন, নেতা এরশাদকে হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কঠিন সময় আমাদের পাশে অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন পল্লীবন্ধুর সহধর্মীনি ও তার সন্তান। আমরা সাদ এরশাদকে নিয়ে আগামীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাল্লাহ। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাঙা বলেন, অবৈধভাবে পল্লীবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকদের দল থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা এসব করছেন, তারা মনে রাখবেন সময় অপেক্ষা করছে, জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
প্রধান বক্তা হিসেবে জাতীয় পার্টি ও বিরোধী দলীয় নেতার মূখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ বলেন, পল্লীবন্ধুর রূহানি সন্তানদের অন্ধকারে রেখে জিএম কাদের অবৈধ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখল করে বেঈমানি করেছেন। শত শত নেতাকর্মীর মতো দলের নির্বাচিত মহাসচিবকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় বহিস্কার করে রাজনৈতিকভাবে অপমানিত করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই দেশব্যাপি সাংগঠনিক সফর শুর হবে। এসব সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দেবেন পল্লীবন্ধুপুত্র সাদ এরশাদ। দল ছেড়ে যাওয়া ও ত্যাগি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব ও দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ্’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রওশন এরশাদের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। সেখানে জিএম কাদেরও থাকবেন। পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক এমপি অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা, রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল হক হাফিজ, সাবেক এমপি এমএ গোফরান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক নূরুল ইসলাম নূরু, শাহ জামাল রানা প্রমূখ।
ঢাকা মহানগর জাপার আহবায়ক জহির উদ্দিন জহিরের সঞ্চালনায় যোগদানকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দয়াল কুমার বড়ুয়া, পীরজাদা জুবায়ের আহমেদ, নাফিস মাহবুব, মেজর অবসরপ্রাপ্ত শিবলী মোহাম্মদ সাদিক ও জাফর ইকবাল নিরব।
এসময় পার্টিতে নবাগত দয়াল কুমার বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধপূর্নিমার শুভ দিনে বিরোধী দলীয় নেতার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে একাত্বতা ঘোষণা করে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত পল্লীবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। 
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, কেন্দ্রীয় নেতা মোল্যা শওগত হোসেন বাবুল, মিজানুর রহমান মিজান, নাসির উদ্দিন মুন্সী ইসরাফিল হোসেন এজাজ আহম্মেদ খান ও আবু সাঈদ লিয়ন প্রমূখ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মীনি এবং যোগ্য উত্তরসূরি সাবেক ফাস্টলেডি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও একাত্বতা ঘোষণাকারী নেতৃবৃন্দরা হলেন-জাতীয় পার্টি পূনর্গঠন প্রক্রিয়ার কো চেয়ারম্যান দয়াল কুমার বড়ুয়া(চট্টগ্রাম), জাপা নেতা পীরজাদা সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ(ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া), জাতীয় পার্টি পূনর্গঠন প্রক্রিয়ার দফতর সম্পাদক নাফিজ মাহবুব(ময়মনসিংহ), জাপা নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত শিবলী মোহাম্মদ সাদিক(চাঁদপুর), মেজর অবসরপ্রাপ্ত তওহিদুল ইসলাম(বরিশাল), শামসুল আলম(চট্টগ্রাম), জাফর ইকবাল নিরব(পিরোজপুর), অ্যাডভোকেট সালেহ চৌধুরী (সিলেট), কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত সফিউল ইসলাম বুলবুল, ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত পারভেজ(রংপুর), মেজর অবসরপ্রাপ্ত ফরিদ মাহমুদ(রংপুর), শাহাদাত হোসেন(চট্টগ্রাম), নাজমুল ইসলাম শিকদার(নরসিংদী), আবু কাওসার খান(ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া) এবং ১৫ জেলার আহ্বায়ক কমিটি।